নিজেস্ব প্রতিনিধিঃ
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের রাজনীতিতে নতুন পরিবর্তন এসেছে। এই নতুন পরিস্থিতিতে বিএনপির নেতাকর্মীরা আবারও উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন। সামনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলীয় কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করেছে বিএনপি। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে।
দলীয় সূত্র জানায়, আসন্ন নির্বাচনে একক প্রার্থী নির্ধারণকে সবচেয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছে বিএনপি। আগামী মাস অর্থাৎ অক্টোবরে দলটির পক্ষ থেকে একক প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য আসন ছাড় দেওয়ার বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসে। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের মাধ্যমে এ নিয়ে কাজ এগিয়ে চলছে বলেও জানানো হয়।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, তফশিল ঘোষণার আগেই ৩শ আসনের অন্তত ৭০ শতাংশে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করার প্রস্তুতি চলছে। অধিকাংশ আসনে এ প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। একাধিক জরিপ ও সাংগঠনিক টিমের মাধ্যমে প্রার্থীদের তালিকা ইতোমধ্যে হাইকমান্ডের কাছে পৌঁছেছে।
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই তালিকা নিয়ে সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে ভার্চুয়ালি বৈঠকও করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, জরিপ ও সাংগঠনিক তালিকা মিলিয়েই একক প্রার্থী নির্ধারণ করা হবে।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে নেতারা জানান, ৩শ সংসদীয় আসনের মধ্যে অন্তত দেড়শ আসনে প্রার্থী নিয়ে তেমন কোনো সমস্যা নেই। এসব আসনে প্রার্থীরা মোটামুটি নির্ধারিত। তবে বাকি আসনগুলোতে প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে বিএনপি বেশ সক্রিয় রয়েছে। পাশাপাশি যুগপৎ আন্দোলনের মিত্রদের জন্যও কিছু আসন ছাড়ার চিন্তাভাবনা চলছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, কয়টি আসন মিত্রদের দেওয়া হবে তা এখনও ঠিক হয়নি। তবে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সব প্রক্রিয়া শেষ করে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য আসন ছাড়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগে তাদের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
ওই নেতা আরও বলেন, প্রার্থী বাছাইয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ত্যাগী, সততা ও জনপ্রিয়তার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, ক্লিন ইমেজধারী ব্যক্তিদের। এবার প্রার্থিতা ঘোষণায় ‘চমক’ও থাকতে পারে। বিশেষ করে অপেক্ষাকৃত তরুণ প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার পরিকল্পনা করছে দলটি।
বিএনপির নির্বাচনী প্রস্তুতি এবার শুধু দলীয় শক্তি পুনর্গঠনেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং ভবিষ্যৎ রাজনীতির চিত্র পাল্টানোর ইঙ্গিতও দিচ্ছে। একক প্রার্থী নির্ধারণের মাধ্যমে দলটি অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কমিয়ে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে চায়। অন্যদিকে তরুণদের প্রাধান্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত নতুন নেতৃত্বের উত্থানেরও বার্তা বহন করছে।