ব্রেকিং নিউজ :

স্মৃতির আয়নায় খালেদা জিয়া: এক সংগ্রামী নেত্রীর জন্মদিনে শ্রদ্ধা


প্রকাশের সময় : অগাস্ট ১৫, ২০২৫, ৫:১০ অপরাহ্ন | ১৩৫
স্মৃতির আয়নায় খালেদা জিয়া: এক সংগ্রামী নেত্রীর জন্মদিনে শ্রদ্ধা

প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক :
আজ ১৫ আগস্ট, বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক মহিয়সী নারীর জন্মদিন—সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। রাজনীতিতে তাঁর অবদান, সংগ্রাম এবং দৃঢ়তার কাহিনী শুধু একটি ব্যক্তির জীবনের গল্প নয়; এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসেরই অংশ।

শৈশব ও পারিবারিক জীবন

বেগম খালেদা জিয়া জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট, দিনাজপুরে। তাঁর শৈশব কেটেছে উত্তরবঙ্গের শান্ত পরিবেশে। শিক্ষাজীবনে তিনি ছিলেন মেধাবী ও দৃঢ়চেতা। ১৯৬০-এর দশকে তাঁর বিয়ে হয় সেনাবাহিনীর তরুণ অফিসার জিয়াউর রহমানের সঙ্গে, যিনি পরবর্তীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক ও রাষ্ট্রপতি হন।

রাজনীতির মঞ্চে আগমন

১৯৮১ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান হত্যার পর দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পাল্টে যায়। তখন বেগম খালেদা জিয়া ধীরে ধীরে বিএনপির নেতৃত্বে আসেন। নারীদের জন্য রাজনীতির মঞ্চ তখনও কঠিন ছিল, কিন্তু তিনি প্রমাণ করেন যে দৃঢ় মনোবল ও সাহস দিয়ে সব বাধা অতিক্রম করা যায়।

গণতন্ত্রের লড়াই

১৯৮০ ও ৯০-এর দশকে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনে তাঁর ভূমিকা ছিল ইতিহাসের অংশ। রাজপথে মিছিলে, সভায়, জনতার মাঝে তাঁর উপস্থিতি ছিল মানুষের প্রেরণার উৎস। ১৯৯১ সালে তিনি প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন—যা ছিল দেশের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার গৌরব।

শাসনকাল ও অবদান

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় তিনি দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, বেসরকারি খাতের বিকাশ, নারীশিক্ষা সম্প্রসারণ, এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তাঁর শাসনামলে এশিয়ান হাইওয়ে সংযোগ, গ্রামীণ সড়ক উন্নয়ন, এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ উল্লেখযোগ্য সাফল্য।

মানবিক দিক

দুর্যোগের সময় তিনি সবসময় ছিলেন সাধারণ মানুষের পাশে। ১৯৯৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সরেজমিন ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা ও পুনর্বাসন কাজে তাঁর নেতৃত্ব মানুষের হৃদয়ে বিশেষ স্থান করে নেয়।

ত্যাগ ও সংগ্রামের প্রতীক: খালেদা জিয়া

বেগম খালেদা জিয়া শুধু একজন রাজনৈতিক নেত্রী নন; তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক জীবন্ত কিংবদন্তি। তাঁর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় গড়া হয়েছে ত্যাগ, সংগ্রাম ও অদম্য সাহসের গল্প দিয়ে।

রাজনৈতিক জীবনে তিনি বারবার প্রতিপক্ষের রোষানলে পড়েছেন। আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শাসনের সময় তাঁকে অন্যায়ভাবে কারাবন্দি করা হয়েছে, তাঁর উপর চালানো হয়েছে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। কিন্তু কোনো নির্যাতনই তাঁর মনোবল ভাঙতে পারেনি।

ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি সহ্য করেছেন অকথ্য বেদনা। প্রিয় সন্তান আরাফাত রহমান কোকোর অকাল মৃত্যু তাঁর হৃদয়ে এক গভীর শূন্যতা সৃষ্টি করেছে। তবুও তিনি ব্যক্তিগত কষ্টকে আড়ালে রেখে দেশের সেবায় নিজেকে নিবেদন করেছেন।

দেশের জন্য তাঁর ত্যাগ কেবল রাজনৈতিক সীমানায় সীমাবদ্ধ নয়—এটি তাঁর জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে প্রতিফলিত।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষার জন্য তিনি নিজের স্বাচ্ছন্দ্য, স্বাস্থ্য, এমনকি জীবন পর্যন্ত বিসর্জন দিতে প্রস্তুত ছিলেন। অসুস্থতা ও অবর্ণনীয় কষ্ট সত্ত্বেও তিনি জনগণের পাশে থেকেছেন, রাজপথে থেকেছেন, সংগ্রামের মিছিলে থেকেছেন।

আজ তাঁর জন্মদিনে আমরা শুধু শুভেচ্ছাই জানাচ্ছি না; আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি তাঁর সেই অদম্য সাহস, অসীম ধৈর্য ও দেশের জন্য সর্বস্ব বিসর্জনের মানসিকতা।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে খালেদা জিয়া চিরকাল থাকবেন ত্যাগ ও সংগ্রামের প্রতীক হয়ে।

প্রেরণার উৎস

আজকের তরুণ প্রজন্মের কাছে খালেদা জিয়ার জীবন এক প্রেরণার গল্প—যেখানে রয়েছে সাহস, ত্যাগ, নেতৃত্ব ও মাতৃস্নেহের সমন্বয়। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, একজন নারী শুধু সংসার নয়, একটি জাতিরও নেতৃত্ব দিতে পারেন।

আজকের এই জন্মদিনে আমরা তাঁকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। কামনা করি তাঁর সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু ও শান্তিময় জীবন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাঁর অবদান যুগ যুগ ধরে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।